স্বামী-স্ত্রী দুইজনের মাঝে তীব্র বিরোধ, আমরা কি তাকে তালাক দেয়ার উপদেশ দিব?
Table of Contents
প্রশ্ন
আমি একজন বিবাহিত পুরুষ। আমার কয়েকজন সন্তান ও একজন স্ত্রী রয়েছে। কিন্তু, স্ত্রীর সাথে সব সময় আমার ঝগড়া লেগে থাকে। আমি অনেকবার তার সাথে আমার সমস্যা নিরসনের উদ্যোগ নিয়েছি; কিন্তু কোন কাজ হয় নাই। সে তালাকের প্রতি সন্তুষ্ট নয়। জৈবিক দিক থেকেও সে আমাকে সন্তুষ্ট করতে পারছে না। আমাদের এখানে প্রথাগতভাবে দ্বিতীয় বিবাহ অনুমতি নয়। কিংবা মানুষ বিবাহিত পুরুষের কাছে তাদের মেয়েদেরকে বিয়ে দেয় না। আমার আশংকা হচ্ছে- এভাবে চলতে থাকলে আমি হারামে লিপ্ত হতে পারি। আপনারা আমাকে অবহিত করুন ও গাইড করুন। আমি আশা করব আপনারা আমাকে উপদেশ দিবেন, কিভাবে আমি এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারি। এর ভাল সমাধান কী হতে পারে? আল্লাহ্ আপনাদেরকে উত্তম প্রতিদান দিন।
উত্তর
আলহামদুলিল্লাহ।
এক:
কোন ঘরই সমস্যা মুক্ত নয়। কিছু ঘরের সমস্যা মামুলি। আর কিছু ঘরের সমস্যা জটিল। যিনি তার সমস্যা সমাধান করতে চান কিংবা অন্যের সমস্যা নিরসন করতে চান তাকে সমস্যার কারণগুলো জানতে হবে; যেগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে, কিংবা দুই বন্ধুর মাঝে, কিংবা পিতা-পুত্রের মাঝে কিংবা যে কোন পক্ষের মাঝে বিরোধ, ঝগড়াঝাঁটি ও মন কষাকষি সৃষ্টি হয়।
আপনার ও আপনার স্ত্রীর মাঝে কী নিয়ে মতবিরোধ তা আমরা জানি না। তাই আমরা এ ব্যাপারে আপনাকে সাধারণ কিছু পরামর্শ দিব, যেগুলো আপনার জন্য ও অন্য কারো জন্য উপকারী হবে।
প্রিয় ভাই, আপনি আপনার ও আপনার স্ত্রীর মাঝে এ সমস্যাগুলোর কারণ খুঁজে বের করুন। হতে পারে আপনিই এ সমস্যাগুলোর মূল ও প্রধান কারণ। আপনার এমন কোন স্বভাব যা আপনি পরিবর্তন করতে পারছেন না, কিংবা আপনার স্ত্রীর সাথে আপনার খারাপ আচরণ, কিংবা আপনার স্ত্রী ও তার সন্তানদের প্রতি আপনার অবহেলা কিংবা অন্য কোন কারণ যার কোন সীমা নেই। তাই আপনার কর্তব্য হচ্ছে নিজের ভুলগুলো শোধরানো। আপনার উচিত হচ্ছে- সে ভুলগুলো যদি আপনার পক্ষ থেকে হয়ে থাকে তাহলে সেগুলোর কারণগুলো দূর করা। আপনার অজানা নয় যে, স্ত্রীর সাথে ভাল আচরণ, স্ত্রীকে গুরুত্ব দেয়া, স্ত্রীর কাজের প্রশংসা করা, সন্তানদের যত্ম নেয়া এবং বাড়ীর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরার করা ইত্যাদি প্রত্যেকটি স্বামীর প্রতি স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করে, উভয়ের মাঝে সম্প্রীতি আনয়ন করে, ঘরের মাঝে দয়া বিস্তার করে।
আর আপনাদের উভয়ের মধ্যস্থিত সমস্যা ও বিরোধগুলোর কারণ যদি আপনার স্ত্রীর পক্ষ থেকে হয় তাহলে আপনার কর্তব্য হচ্ছে- প্রজ্ঞা ও সদুপদেশের মাধ্যমে এর সুরাহা করা। স্বামীর জন্য সবচেয়ে সহজ হচ্ছে – মূলতঃ ও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে- স্ত্রীকে অনুগত বানানো, স্ত্রীর অপছন্দীয় জিনিসকে পছন্দনীয় করে তোলা, পছন্দনীয় জিনিসকে অপছন্দনীয় করে তোলা। কারণ কোন নারী যখন কোন পুরুষকে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে সন্তুষ্ট হয় তার পছন্দ ও অভিপ্রায় অনুযায়ী বসবাস করতেও সন্তুষ্ট থাকে। এটা শর্ত নয় যে, স্ত্রী আগে থেকে সেটাকে পছন্দ করতে হবে কিংবা সেটার প্রতি সন্তুষ্ট থাকতে হবে। এটা সকল স্ত্রীর স্বাভাবিক মনোবৃত্তি। এ কারণে স্ত্রী তার স্বামীর অনুগামী হয়ে থাকে। এ হেতুর কারণেই মুসলিম নারীকে কাফেরের কাছে বিয়ে দেয়া হারাম। এ হেতুর কারণেই সৎ স্বামী নির্বাচন করার আদেশ দেয়া হয়েছে। যেন স্বামী সচ্চরিত্রবান ও দ্বীনদার হয়; যাতে করে নারী তার দ্বীনদারি ও চরিত্র দ্বারা নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত না হয়।
দুই:
হতে পারে কোন স্বামীর মনোবৃত্তির সাথে স্ত্রীর মনোবৃত্তি মিলবে না। না স্বামী তার স্ত্রীর সাথে ভাল আচরণ করতে সক্ষম; আর না স্ত্রী তার স্বামীর বৈধ ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষার ডাকে সাড়া দিতে প্রস্তুত। এমন হলে এটাই তাদের দু-জনের মাঝে বিচ্ছেদের স্টেশন। এমতাবস্থায় তারা দুইজন স্বামী-স্ত্রী হিসেবে থাকা সময় নষ্ট করা এবং সমস্যা ও পাপ-পঙ্কিলতাকে বাড়ানো ছাড়া আর কিছু নয়।
প্রশ্নে যা এসেছে সে আলোকে আমরা বলতে চাই: যদি স্বামী দেখেন যে, স্ত্রী স্বামীর জন্য নিজেকে সংশোধন করতে প্রস্তুত নয় এবং স্বামী নিজে এ সকল সমস্যার কারণ নয়: তাহলে তার সামনে তালাক ছাড়া আর কোন রাস্তা নেই। আর এটাই সর্বশেষ সমাধান! এই সমাধানে স্ত্রী সন্তুষ্ট থাকা শর্ত নয়। তালাক কার্যকর হওয়ার ক্ষেত্রে তার সন্তুষ্টি ধর্তব্য নয়। আমরা সমস্যাগুলোর সমাধান হিসেবে তালাককে উল্লেখ করেছি নিম্নোক্ত কারণগুলোর প্রেক্ষিতে যে কারণগুলো আপনার প্রশ্নের মধ্যে এসেছে:
১. স্ত্রীকে সংশোধন করা সম্ভবপর না হওয়া এবং দীর্ঘকাল ধরে আপনাদের দুই জনের মাঝে বিরোধ চলমান থাকা।
২. পরিবেশগত কারণে অন্য কোন নারীকে আপনি বিয়ে করতে না পারা।
৩. আপনার যৌন চাহিদার ডাকে আপনার স্ত্রী সাড়া না দেয়ার প্রেক্ষিতে আপনি হারামে লিপ্ত হওয়ার আশংকা করা।
তাই আপনি তাকে সর্বশেষ সুযোগ দিন এবং তার নিজেকে ও নিজের অবস্থাকে শোধরানোর জন্য একটি সময় নির্দিষ্ট করুন। যদি তার পক্ষ থেকে কোন পরিবর্তন না ঘটে তাহলে তালাক দিতে আপনি দ্বিধা করবেন না এবং হারামে লিপ্ত হওয়া থেকে সতর্ক থাকুন। আল্লাহ্ শরিয়ত অনুযায়ী আপনি এখন মুহসান (বিবাহিত)। আল্লাহ্ না করুন হারামে লিপ্ত হলে আপনার শাস্তি পাথর নিক্ষেপে হত্যা। ইসলামে অন্যের অধিকার লঙ্ঘনকারীর ব্যাপারে অনেক হুমকি এসেছে এবং ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার ব্যাপারে অনেক সতর্কবাণী এসেছে; আল্লাহ্ যা হারাম করেছেন। অতএব, এর থেকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকুন।
আল্লাহ্ই তাওফিকদাতা।