কুরআনে কারীম তেলাওয়াত করার সময় কিভাবে আমরা অনুভূতিতে আনতে পারি যে, আল্লাহ্‌ আমাদেরকে সম্বোধন করছেন?

কুরআনে কারীম তেলাওয়াত করার সময় কিভাবে আমরা অনুভূতিতে আনতে পারি যে, আল্লাহ্‌ আমাদেরকে সম্বোধন করছেন?

প্রশ্ন

আলেমগণ বলেন: কুরআনে কারীম তেলাওয়াত করার সময় ব্যক্তি যেন এ অনুভুতি লালন করে যে, প্রত্যেক আয়াতে আল্লাহ্‌ তাকে সম্বোধন করছেন। কিন্তু, শাইখ! আল্লাহ্‌ যখন কাফের, মুশরিক, মিথ্যাবাদী ও অন্যদেরকে সম্বোধন করছেন তখন আমি কিভাবে অনুভব করতে পারি যে, আল্লাহ্‌ আমাকেই সম্বোধন করছেন; অথচ আমি তো— মুসলিম ও আখিরাতে বিশ্বাসী মুমিন। বারাকাল্লাহু ফিকুম।


কুরআনে কারীম তেলাওয়াত করার সময় কিভাবে আমরা অনুভূতিতে আনতে পারি যে, আল্লাহ্‌ আমাদেরকে সম্বোধন করছেন?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।

কুরআনের মাধ্যমে আল্লাহ্‌ বান্দাকে সম্বোধন করছেন সে অনুভূতি অর্জিত হবে কুরআন তেলাওয়াতের সময় চুপ থাকা, গভীর চিন্তাভাবনা (তাদাব্বুর) করা ও উত্তম আমলের মাধ্যমে। যেহেতু একজন মুসলিম এ ঈমান রাখে যে, কুরআনের মাধ্যমে আল্লাহ্‌ তার বান্দাদেরকেই সম্বোধন করেন: তিনি তাদেরকে নির্দেশ দেন, নিষেধ করেন। কখনও বিশেষ কোন গোষ্ঠীকে নির্দিষ্ট করে সম্বোধন করেন; আর কখনও সাধারণভাবে সম্বোধন করেন।

যখন আল্লাহ্‌ মুমিনদেরকে নির্দিষ্ট করে সম্বোধন করেন তখন একজন মুসলিম এ সম্বোধনটিকে স্মরণে আনবে এবং বলবে: আমরা শুনলাম এবং মানলাম। ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন: “যখন আপনি শুনবেন আল্লাহ্‌ তাআলা বলছেন: ‘হে যারা ঈমান এনেছ’ তখন আপনি কান খাড়া রাখুন। কারণ আল্লাহ্‌ হয়তো কোন ভাল কাজের নির্দেশ দিবেন কিংবা কোন মন্দ কাজ থেকে বারণ করবেন।”[তাফসিরে ইবনে কাছির (১/৩৭৪)]

যখন আল্লাহ্‌ সকল মানুষকে লক্ষ্য করে সম্বোধন করেন তখনও স্মরণ করবে যে আল্লাহ্‌ তাকে সম্বোধন করছেন: যদি সেটা কোন আদেশ হয় তাহলে সেটা পালন করবে, যদি কোন নিষেধ হয় তাহলে সেটা থেকে বিরত থাকবে, যদি কোন উপদেশ হয় তাহলে উপদেশ মোতাবেক আমল করবে।

গোটা কুরআনের ক্ষেত্রেই বান্দা এ অনুভুতি লালন করবে যে, আল্লাহ্‌ তাকে সম্বোধন করছেন। তবে কুরআনের যে অংশ তেলাওয়াত করা হচ্ছে সে অংশ মোতাবেক এ অনুভূতি ভিন্ন ভিন্ন হবে:

যখন কোন আনুগত্যের কথা উল্লেখ করা হবে তখন স্মরণে আনবে যে, আল্লাহ্‌ তাকে এ আনুগত্য করার নির্দেশসূচক সম্বোধন করছেন। যখন কোন পাপের উল্লেখ আসবে তখন স্মরণ করবে যে, আল্লাহ্‌ তাকে এ গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার নিষেধাজ্ঞাসূচক সম্বোধন করছেন। যখন ঈমানদারদের উল্লেখ আসবে তখন স্মরণ করবে যে, আল্লাহ্‌ তাদের সাথে মিত্রতা রাখা ও ভালবাসা পোষণ করার সম্বোধন করছেন। যখন কুফর ও নিফাক ওয়ালাদের উল্লেখ আসবে তখন স্মরণ করবে যে, আল্লাহ্‌ তাদের সাথে শত্রুতা রাখা ও ঘৃণা করার ব্যাপারে সম্বোধন করছেন।

যখন শয়তানের উল্লেখ আসবে তখন স্মরণে আনবে যে, শয়তানের শত্রুতা ও বিরুদ্ধাচারণ করা, তার অনুসরণ না করা এবং আল্লাহ্‌র আনুগত্য মোতাবেক আমল করার ব্যাপারে সম্বোধন হচ্ছে। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “হে বনী আদম! আমি কি তোমাদেরকে বলে দেইনি যে, তোমরা শয়তানের দাসত্ব করবে না, সে তোমাদের স্পষ্ট শত্রু? আর (বলে দেইনি যে,) আমারই ইবাদত করবে? এটাই তো সরল পথ।”[সূরা ইয়াসীন, আয়াত: ৬০-৬১]

যখন সত্য ও সত্যবাদীদের উল্লেখ আসবে তখন স্মরণে আনবে যে, আল্লাহ্‌ তাদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য সম্বোধন করছেন।

যখন মিথ্যা ও মিথ্যাবাদীদের উল্লেখ আসবে তখন স্মরণে আনবে যে, আল্লাহ্‌ তাদের অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার জন্য সম্বোধন করছেন।

ইমাম আবু বকর আল-আজুর্‌রি (রহঃ) বলেন:

এরপর আল্লাহ্‌ তাআলা তার মাখলুককে কুরআন অনুধাবন করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি বলেন: “তবে কি তারা কোরআন অনুধাবন করে না; নাকি তাদের অন্তরে তালা লাগানো আছে?”[সূরা মুহাম্মদ, আয়াত: ২৪]

তিনি আরও বলেন: “তবে কি তারা কুরআন অনুধাবন করবে না? এই কুরআন যদি আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্য কারো কাছ থেকে আসত তাহলে তারা এতে অনেক বৈপরীত্য দেখতে পেত।”[সূরা নিসা, আয়াত: ৮২]

মুহাম্মদ বিন হুসাইন (তিনিই আজুর্‌রি) বলেন: আপনাদের প্রতি আল্লাহ্‌ রহম করুন! আপনারা কি দেখছেন না যে, আল্লাহ্‌ তাঁর বান্দাদেরকে তাঁর বাণী অনুধাবন করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করছেন। যে ব্যক্তি তাঁর বাণী অনুধাবন করে সে রব্বকে চিনতে পারে, তাঁর মহা ক্ষমতা ও শক্তি জানতে পারে, ঈমানদারদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ অবগত হতে পারে, জানতে পারে আল্লাহ্‌ তাঁর বান্দাদের উপর যা কিছু ফরয করেছেন; তখন ওয়াজিব পালন করাকে সে নিজের উপর অবধারিত করে নেয় এবং তার মহান মনিব যা কিছু থেকে থেকে সতর্ক করেছেন সেটা থেকে সতর্ক হয় এবং যা কিছুর প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন সেগুলোর প্রতি আগ্রহী হয়।

নিজে কুরআন তেলাওয়াত করার সময় কিংবা অন্যের তেলাওয়াত শ্রবণ করার সময় যে ব্যক্তির অবস্থা এমন হবে তার জন্য কুরআন নিরাময়ক। সে ব্যক্তির সম্পদ না থাকলেও সে ধনী। আত্মীয়-স্বজন না থাকলেও সে শক্তিমান। যখন অন্যেরা নির্জনতা অনুভব করে তখন সে তা অনুভব করে না। সে যখন কোন সূরা পড়া শুরু করে তখন তার লক্ষ্য থাকে কখন আমি যা তেলাওয়াত করছি সেটা থেকে নসীহত গ্রহণ করতে পারব? তার উদ্দেশ্য এটা থাকে না যে কখন আমি সূরাটি শেষ করতে পারব? তার উদ্দেশ্য থাকে কখন আমি আল্লাহ্‌র ভাষ্য উপলব্ধি করতে পারব? কখন আমি (নিষেধ) থেকে বিরত হব? কখন আমি শিক্ষা গ্রহণ করব? কেননা তার কুরআন তেলাওয়াত হচ্ছে- ইবাদত। গাফলতি নিয়ে কোন ইবাদত হয় না। আল্লাহ্‌ই তাওফিকদাতা।[“আখলাকু হামালাতিল কুরআন”, পৃষ্ঠা-৩]

অতএব, আল্লাহ্‌র কিতাব তেলাওয়াতকারীর অবস্থা এমনই হোক।

আল্লাহ্‌ তাআলাই সর্বজ্ঞ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked

{"email":"Email address invalid","url":"Website address invalid","required":"Required field missing"}

ISLAM


Get a Free E-Book

Get free islamic ebook.