কালেমায়ে তাওহীদ-এর শর্তসমূহ:
(১) ইতিবাচক ও নেতিবাচক অর্থ জানা, যা না জানার বিপরীত।
নেতিবাচক হলো, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য ইবাদাত সাব্যস্ত না করা। আর ইতিবাচক হলো ইবাদাত এককভাবে তাঁর জন্য সাব্যস্ত করা। তাঁর কোনো অংশীদার নেই, তিনিই একমাত্র ইবাদাতের মালিক ও হক্বদার।
(২) এ কালেমার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখা, যা যাবতীয় সন্দেহ-সংশয়ের বিপরীত।
অর্থাৎ এ কালেমার দাবীর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রেখে আন্ত-রিকভাবে নিশ্চিত হয়ে মুখে উচ্চারণ করা।
(৩) এ কালেমাকে মনে প্রাণে গ্রহণ করা, যা প্রত্যাখ্যানের পরিপন্থী।
অর্থাৎ এ কালেমার সকল দাবী-চাহিদা ও তার বক্তব্য গ্রহণ করা। সংবাদসমূহের প্রতি বিশ্বাস রাখা, আদেশসমূহ পালন করা। নিষেধসমূহ থেকে বিরত থাকা। কুরআন ও হাদীসের দলীল পরিত্যাগ ও অপব্যাখ্যা না করা।
(৪) কালেমার প্রতি অনুগত হওয়া, যা ছেড়ে দেওয়ার পরিপন্থী। অর্থাৎ এ কালেমা যে সকল বিধানের নির্দেশ দিয়েছে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্যভাবে তার প্রতি অনুগত থাকা।
(৫) এ কালেমাকে সত্য জানা, যা মিথ্যারোপ করার বিরোধী। আর তা হলো বান্দা এ কালেমাকে সত্য জেনে অন্তর থেকে উচ্চারণ করবে। অর্থাৎ এ কালেমা পাঠকারীর অন্তর তার কথা মোতাবেক হবে এবং তার বাহ্যিক অবস্থা অভ্যন্তরীণ অবস্থা অনুযায়ী হবে।
অতঃপর যে ব্যক্তি এ কালেমা মুখে উচ্চারণ করেছে অথচ তার দাবীকে অস্বীকার করেছে নিশ্চয় তার মুখের এ উচ্চারণ তার কোনো কাজে আসবে না। যেমন, মুনাফিকদের অবস্থা ছিল। তারা এ কালেমা মুখে উচ্চারণ করতো কিন্তু অন্তরে অস্বীকার করতো।
(৬) পূর্ণ একনিষ্ঠতা থাকা, যা শির্কের পরিপন্থী। আর তা হলো বান্দা তার আমলকে নেক নিয়াতের দ্বারা শির্কের সকল প্রকারের গ্লানি থেকে মুক্ত রাখবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ حُنَفَآءَ وَيُقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُؤۡتُواْ ٱلزَّكَوٰةَۚ وَذَٰلِكَ دِينُ ٱلۡقَيِّمَةِ ٥﴾ [البينة: ٥]
“তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে ইবাদাত করার”। [সূরা আল-বায়্যিনাহ, আয়াত: ৫]
(৭) এ কালেমার সাথে মুহাব্বাত-ভালোবাসা রাখা, যা বিদ্বেষের পরিপন্থী।
আর তা বাস্তবায়িত হবে, এ কালেমাকে, তার দাবীকে, তার নির্দেশিত বিধানকে এবং যারা এ কালেমার শর্ত মোতাবেক চলে তাদেরকে ভালোবাসার মাধ্যমে। আর উল্লিখিত কথাগুলোর বিপরীত কথার সাথে বিদ্বেষ রাখার মাধ্যমে।
এর নিদর্শন হলো, আল্লাহর প্রিয় বস্তুকে প্রাধান্য দেওয়া, যদিও তা প্রবৃত্তি বিরোধী হয়। আর আল্লাহর যা অপছন্দ তা অপছন্দ করা, যদিও তার দিকে প্রবৃত্তি ধাবিত হয়। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে যাদের বন্ধুত্ব রয়েছে তাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখা। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে যাদের শত্রুতা রয়েছে তাদের সাথে শত্রুতা রাখা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿قَدۡ كَانَتۡ لَكُمۡ أُسۡوَةٌ حَسَنَةٞ فِيٓ إِبۡرَٰهِيمَ وَٱلَّذِينَ مَعَهُۥٓ إِذۡ قَالُواْ لِقَوۡمِهِمۡ إِنَّا بُرَءَٰٓؤُاْ مِنكُمۡ وَمِمَّا تَعۡبُدُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ كَفَرۡنَا بِكُمۡ وَبَدَا بَيۡنَنَا وَبَيۡنَكُمُ ٱلۡعَدَٰوَةُ وَٱلۡبَغۡضَآءُ أَبَدًا حَتَّىٰ تُؤۡمِنُواْ بِٱللَّهِ وَحۡدَهُۥٓ إِلَّا قَوۡلَ إِبۡرَٰهِيمَ لِأَبِيهِ لَأَسۡتَغۡفِرَنَّ لَكَ وَمَآ أَمۡلِكُ لَكَ مِنَ ٱللَّهِ مِن شَيۡءٖۖ رَّبَّنَا عَلَيۡكَ تَوَكَّلۡنَا وَإِلَيۡكَ أَنَبۡنَا وَإِلَيۡكَ ٱلۡمَصِيرُ ٤﴾ [الممتحنة : ٤]
“তোমাদের জন্য ইবরাহীম ও তার অনুসারীদের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ, তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিল, তোমাদের সঙ্গে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার ইবাদাত কর তার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নাই। আমরা তোমাদেরকে মানি না। তোমাদের ও আমাদের মধ্যে শুরু হলো শত্রুতা ও বিদ্বেষ চিরকালের জন্য, যতক্ষণ না তোমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আন”। [সূরা আল-মুমতাহানাহ, আয়াত: ৪]
তিনি আরো বলেন,
﴿وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَتَّخِذُ مِن دُونِ ٱللَّهِ أَندَادٗا يُحِبُّونَهُمۡ كَحُبِّ ٱللَّهِۖ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَشَدُّ حُبّٗا لِّلَّهِۗ وَلَوۡ يَرَى ٱلَّذِينَ ظَلَمُوٓاْ إِذۡ يَرَوۡنَ ٱلۡعَذَابَ أَنَّ ٱلۡقُوَّةَ لِلَّهِ جَمِيعٗا وَأَنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلۡعَذَابِ ١٦٥﴾ [البقرة: ١٦٥]
“তথাপি কেউ কেউ আল্লাহ ছাড়া অপরকে আল্লাহর সমকক্ষরূপে গ্রহণ করে এবং আল্লাহকে ভালোবাসার ন্যায় তাদেরকে ভালোবাসে, কিন্তু যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি তাদের ভালোবাসা দৃঢ়তম”। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৬৫]
আর যে ব্যক্তি ইখলাস ও ইয়াকীনের সাথে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ “আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো মা‘বুদ নেই’’ একথা বলবে এবং সকল পাপাচার, বিদ‘আত, ছোট শির্ক ও বড় শির্ক থেকে মুক্ত থাকবে, সে দুনিয়াতে পথভ্রষ্ট থেকে হিদায়াত পাবে। আর আখিরাতে শাস্তি থেকে নিরাপত্তা পাবে। তার ওপর জাহান্নাম হারাম হয়ে যাবে।
এ শর্তগুলো পূর্ণ করা বান্দার ওপর আবশ্যক। আর এ শর্তগুলো পূর্ণ করা অর্থ হলো যে, এ শর্তগুলো একজন বান্দার জীবনে সমাবেশ ঘটা এবং তা জানা অত্যাবশ্যক হওয়া। তবে তা মুখস্থ করা জরূরী নয়।
এ মহান কালেমা (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু) হলো তাওহীদুল উলুহীয়্যাহ বা ইবাদতে একত্বতা গ্রহণ, যা তাওহীদের প্রকারসমূহের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তাওহীদ, এ বিষয়েই নবীগণ ও তাদের সম্প্রদায়ের মাঝে মতানৈক্য সংঘটিত হয়েছিল। আর এরই বাস্তবায়নের জন্যে রাসূলগণকে প্রেরণ করা হয়েছিল।
যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَقَدۡ بَعَثۡنَا فِي كُلِّ أُمَّةٖ رَّسُولًا أَنِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَٱجۡتَنِبُواْ ٱلطَّٰغُوتَۖ فَمِنۡهُم مَّنۡ هَدَى ٱللَّهُ وَمِنۡهُم مَّنۡ حَقَّتۡ عَلَيۡهِ ٱلضَّلَٰلَةُۚ فَسِيرُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ فَٱنظُرُواْ كَيۡفَ كَانَ عَٰقِبَةُ ٱلۡمُكَذِّبِينَ ٣٦﴾ [النحل: ٣٦]
“আর অবশ্যই আমরা আল্লাহর ইবাদাত করার ও তাগুতকে বর্জন করার নির্দেশ দেওয়ার জন্যই তো প্রত্যেক জাতির মধ্যে রাসূল পাঠিয়েছি”। [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৩৬]
তিনি আরো বলেন,
﴿وَمَآ أَرۡسَلۡنَا مِن قَبۡلِكَ مِن رَّسُولٍ إِلَّا نُوحِيٓ إِلَيۡهِ أَنَّهُۥ لَآ إِلَٰهَ إِلَّآ أَنَا۠ فَٱعۡبُدُونِ ٢٥﴾ [الانبياء: ٢٥]
“আমরা তোমার পূর্বে যে রাসূলই প্রেরণ করেছি তাঁর নিকটে এ অহী অবতীর্ণ করেছি যে, আমি ব্যতীত অন্য কোনো সত্য মা‘বুদ নেই, সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদাত কর”। [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ২৫] আর যখন শুধু তাওহীদ বলা হবে, তখন তা থেকে উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ।