বিয়ের খোতবা পড়াকালে সূরা ফাতিহা পড়া
Table of Contents
প্রশ্ন
প্রশ্ন: আমি একজন যুবক মানুষ; বিয়ে করতে যাচ্ছি। আমি যে দেশে বিয়ের আকদ করতে যাচ্ছি সে দেশে তারা ‘ফাতিহা পড়া’ নামক একটি বিষয় করে থাকে। আমাদের দেশে যখন কোন পুরুষ বিয়ে করতে যায় তখন তারা সূরা ফাতিহা পড়ে। এ উদ্দেশ্যে তারা বরের আত্মীয়-স্বজনকে দাওয়াত করে, তাদের জন্য মিষ্টান্ন ও পানীয় পেশ করে। এভাবে ফাতিহা পড়া কি সুন্নত? যদি সুন্নত হয় তাহলে এটা করা দ্বারা কী আরোপিত হয়?
উত্তর
আলহামদুলিল্লাহ।
বিয়ের আকদকালে কিংবা প্রস্তাবকালে সূরা ফাতিহা পড়া সুন্নাহ নয়; বরং এটি বিদআত। কুরআনের বিশেষ কোন অংশ দিয়ে বিশেষ কোন আমল করা দলিল ছাড়া জায়েয নয়।
আবু শামা আল-মাকদিসি ‘আল-বায়িস আল ইনকারিল বিদা ও হাওয়াদিস’ গ্রন্থে (১৬৫) বলেন: কোন ইবাদতকে বিশেষ কোন সময়ের জন্য খাস করা—শরিয়ত যা করেনি— অনুচিত। কারণ বান্দার এ ধরণের খাস করার অধিকার নেই। বরং সেটা শরিয়তপ্রণেতার অধিকার।[সমাপ্ত]
ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির আলেমগণকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: পুরুষ কর্তৃক নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়াকালে সূরা ফাতিহা পড়া কী বিদআত?
জবাবে তাঁরা বলেন: পুরুষ কর্তৃক কোন নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়াকালে কিংবা বিয়ের আকদ কালে সূরা ফাতিহা পড়া বিদআত।[সমাপ্ত]
এভাবে সূরা ফাতিহা পড়ার প্রেক্ষিতে বিয়ের আকদ সংক্রান্ত কোন বিধান আরোপিত হয় না। কারণ সূরা ফাতিহা পড়ার মানে এ নয় যে, বিয়ের আকদ সম্পন্ন হয়েছে। বরং ধর্তব্য হবে— অভিভাবক ও সাক্ষীদের উপস্থিতিতে ইজাব (বিয়ের প্রস্তাবনা) ও কবুল (গ্রহণ)।
সুন্নাহ হচ্ছে- বিয়ের খোতবার সময় ‘খোতবাতুল হাজাহ’ পড়া।
আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিয়ের ক্ষেত্রে ও অন্যান্য ক্ষেত্রে আমাদেরকে ‘খোতবাতুল হাজাহ’ (প্রয়োজন পূরণের খোতবা বা বক্তৃতা) শিখাতেন: ‘ইন্নাল হামদা লিল্লাহ, নাসতায়িনুহু, ওয়া নাসতাগফিরুহু, ওয়া নাউজুবিহি মিন শুরুরি আনফুসিনা, মান ইয়াহদিহিল্লাহু ফালা মুদিল্লাল্লাহ, ওয়া মান ইউদলিল ফালা হাদিয়া লাহ, ওয়া আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহ।’ (অর্থ- সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আমরা তাঁর কাছেই সাহায্য চাই। তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি। আমাদের আত্মার অনিষ্ট থেকে তাঁর কাছে আশ্রয় চাই। আল্লাহ যাকে হেদায়েত দেন তাকে পথভ্রষ্ট করার কেউ নেই। আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তাকে হেদায়েত দেয়ার কেউ নেই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ তাঁর বান্দাহ ও তাঁর রাসূল।)
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُواْ رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالاً كَثِيراً وَنِسَاء وَاتَّقُواْ اللّهَ الَّذِي تَسَاءلُونَ بِهِ وَالأَرْحَامَ إِنَّ اللّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيباً
(অর্থ- হে মানুষ! তোমরা তোমাদের রবের তাকওয়া অবলম্বন কর; যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন ও তার থেকে তার স্ত্রীকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের দুজন থেকে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দেন; আর তোমরা আল্লাহ্র তাকওয়া অবলম্বন কর যাঁর নামে তোমরা একে অপরের কাছে নিজ নিজ হক্ দাবী কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর রক্ত-সম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারেও। নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক।[সূর নিসা, আয়াত: ০১]
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلاَ تَمُوتُنَّ إِلاَّ وَأَنتُم مُّسْلِمُونَ
(অর্থ- হে
মুমিনগণ!
তোমরা
যথার্থভাবে
আল্লাহ্র
তাকওয়া
অবলম্বন কর
এবং তোমরা
মুসলিম (পরিপূর্ণ
আত্মসমর্পণকারী)
না হয়ে কোন
অবস্থায় মৃত্যুবরণ
করো না”[সূরা
আলে-ইমরান,
আয়াত: ১০২]
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا
اللَّهَ وَقُولُوا قَوْلاً سَدِيداً يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ
لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَمَن يُطِعْ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزاً
عَظِيماً
(অর্থ- হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ্র তাকওয়া অবলম্বন কর এবং সঠিক কথা বল; তাহলে তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের কাজ সংশোধন করবেন এবং তোমাদের পাপ ক্ষমা করবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই মহাসাফল্য অর্জন করবে।”[সূরা আহযাব, আয়াত: ৭০-৭১]
[সুনানে আবু দাউদ (২১১৮), আলবানী ‘সহিহ আবু দাউদ’ গ্রন্থে হাদিসটিকে ‘সহিহ’ আখ্যায়িত করেছেন]
লোকেরা এ সুন্নতকে বাদ দিয়ে বিদআতকে আঁকড়ে ধরেছে।
আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন মুসলমানদেরকে তাদের আসল দ্বীনের দিকে উত্তমরূপে ফিরিয়ে আনেন।
আল্লাহই ভাল জানেন।