এক তালিবে ইল্‌ম নারীদেরকে ইল্‌ম শিক্ষা দিতে গিয়ে নিজে তাদের একজনের সাথে বিশেষ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন

এক তালিবে ইল্‌ম নারীদেরকে ইল্‌ম শিক্ষা দিতে গিয়ে নিজে তাদের একজনের সাথে বিশেষ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন

প্রশ্ন

আমাদের দেশে একজন তালিবে ইল্‌ম আছে। তাঁর ইল্‌ম ভাল। তিনি আমাদেরকে ইলম অর্জন, তাকওয়া, সুন্নাহর অনুসরণ ও আলেমদের সাথে আদব মেনে চলার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করেন। আমরা তাঁকে হকপন্থী সালাফী হিসেবে জানি। তিনি আমাদেরকে দ্বীনের খুঁটিনাটি যা কিছু শিক্ষা দেন আমরা তাঁকে অনুসরণ করে চলি। কুরআনে কারীম ও রাসূল (সাঃ) এর হাদিস শিক্ষাদানের জন্য তিনি সনদপ্রাপ্ত। যদিওবা আমরা উনার তাকলীদ করি, কিন্তু তিনি আমাদেরকে তাকলীদ না-করার প্রতি উৎসাহিত করেন। তিনি ফতোয়ার ক্ষেত্রে অথবা নারী হিসেবে আমাদের সাথে আচার আচরণের ক্ষেত্রে আল্লাহ্‌কে ভয় করেন বলে আমি মনে করি। আমি তার জ্ঞান প্রচারের ক্ষেত্রে কিছু ভূমিকা রেখে থাকি। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো একজন মহিলা আমাকে অবহিত করেছেন (আমার কাছে তাকে সত্যবাদী মনে হয়) যে, এই নারীর সাথে তার অবৈধ সম্পর্ক আছে। সেটা সম্পূর্ণ গোপনে। আমি আবারও বলছি সম্পূর্ণ গোপনে। মহিলাটি জানাচ্ছেন যে, তিনি এ সম্পর্ককে বিয়ের মাধ্যমে শরিয়তসম্মত রূপ দেয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু নিজস্ব কিছু পরিস্থিতির কারণে তিনি সেটা পারছেন না। পরিতাপের বিষয় হলো- তা সত্ত্বেও তিনি এ মহিলার সাথে কথাবার্তা বন্ধ করেননি। তিনি বলছেন যে, তিনি পরিবেশ তৈরী করার চেষ্টা করছেন। এমতাবস্থায়, আমরা কি তার কাছ থেকে ইলেম অর্জনে বিরত থাকব? তার দরসে বসা থেকে বিরত থাকব? শয়তান আমাকে ধাঁধায় ফেলে দিচ্ছে, আমাকে বলছে- এই আলেম যা বলে তিনি নিজে সে অনুযায়ী আমল করেন না। তার প্রতিটি কথার মধ্যে শয়তান আমাকে সন্দেহে ফেলে দিচ্ছে। নাকি আমরা বলব- মানুষ মাত্রই গুনাহগার। হতে পারে এই গুনার কাছে তিনি হেরে গেছেন। আমাদের সাথে আচার ব্যবহারে তিনি আল্লাহ্‌কে ভয় করেন এটাই তো আমরা জানি। আর এ বিষয়টি একেবারে একটা গোপন বিষয়। গুটিকতক মানুষ ছাড়া এ বিষয়টি কেউ জানে না। আমি যে, এ বিষয়টি জানি তিনি তা জানেন না। নবী ছাড়া তো নিষ্পাপ কেউ নেই।


এক তালিবে ইল্‌ম নারীদেরকে ইল্‌ম শিক্ষা দিতে গিয়ে নিজে তাদের একজনের সাথে বিশেষ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন

উত্তর

জবাব:

আলহামদুলিল্লাহ্‌ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য)।

এ কথা সত্য যে, সকল গুনাহ থেকে মুক্ত এমন একজন মানুষও পাওয়া যাবে না। প্রত্যেক মানুষের গুনাহ রয়েছে। যে গুণার বিষয়টা শুধু সে ব্যক্তি জানে এবং তার রবব জানে। এটাই বনী আদমের প্রকৃত অবস্থা। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, যে সত্ত্বার হাতে রয়েছে আমার প্রাণ যদি তোমরা গুনাহ না করতে তাহলে আল্লাহ তোমাদের বদলে এমন এক কওমকে নিয়ে আসতেন যারা গুনাহ করত, আবার আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইত, তখন আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দিতেন। [সহীহ মুসলিম, ২৭৪৯]

কিন্তু এটাও সত্য যে, আল্লাহর বান্দাদের অবস্থা নারীদেরকে দ্বীন শিক্ষদানে নিয়োজিত এই তালেবে ইলমের মত নয়। আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে বলেনঃ ‘‘আর যদি শয়তানের প্ররোচনা তোমাকে প্ররোচিত করে তাহলে আল্লাহর শরণাপন্ন হও, তিনি শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী। যাদের মনে আল্লাহর ভয় রয়েছে তাদের উপর শয়তানের আগমন হওয়ার সাথে সাথে তারা সতর্ক হয়ে যায় এবং তখনই তাদের বিবেচনাশক্তি জাগ্রত হয়ে উঠে। পক্ষান্তরে যারা শয়তানের ভাই তাদেরকে শয়তান ক্রমাগত ভ্রষ্টতার দিকে নিয়ে যায়। অতঃপর তাতে কোন কমতি করে না’’। [সূরা আরাফ, ২০০-২০২] শাইখ ইবনে সাদী (রহঃ) বলেন, আল্লাহর কোন বান্দা গাফলতির দশা থেকে মুক্ত নয়। আর শয়তান বান্দার গাফলতির সুযোগ নেয়ার জন্য সীমান্ত প্রহরীর মত ওৎ পেতে বসে আছে। যখনই সে সুযোগ পায় আল্লাহর বান্দার উপর চড়াও হয়। তাই এখানে আল্লাহ তাআলা পথচ্যুত মুত্তাকীদের আলামত উলে­খ করেছেন। যখন কোন মুত্তাকী বান্দার গুনাহর প্রতি দুর্বলতা প্রকাশ পায়, তিনি শয়তানের প্ররোচনায় কোন হারাম কাজ করে ফেলে অথবা কোন ওয়াজিব পরিত্যাগ করে ফেলেন সাথে সাথে তিনি পর্যালোচনা করে বের করেন কোন পথ দিয়ে শয়তান তাকে প্ররোচিত করেছে, তাঁর উপর আল্লাহ যা ফরজ করেছেন তা তিনি স্মরণ করেন এবং ঈমানের অপরিহার্য দাবী কি তা তিনি মনে করেন। তখনই তাঁর বিবেচনাশক্তি জাগ্রত হয়ে উঠে এবং তিনি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান। তওবায়ে নাসুহ এর মাধ্যমে গুনার ক্ষতি পুষিয়ে নেন। এবং অধিক পরিমাণে নেকের কাজ করেন। এভাবে চরমভাবে নিরাশ করে শয়তানকে প্রতিহত করেন। শয়তান যতটুকু ক্ষতি করতে পেরেছে তিনি এর চেয়ে বেশী পুষিয়ে নেন। পক্ষান্তরে শয়তানের ভাইয়েরা, শয়তানের বন্ধুরা যখন কোন গুনাতে লিপ্ত হয় তখন তারা একের পর এক গুনাতে লিপ্ত হতে থাকে, গুনাহ থেকে তারা নিরস্ত হয় না। শয়তান যখন দেখতে পায় তারা গুনার প্রতি আসক্ত, মন্দ কাজে তাদের উৎসাহের কমতি নেই তখন শয়তান তাদের পিছু ছাড়ে না। [তাফসীরে সাদী, পৃঃ ৩১৩]

এই তালেবে ইলেম কোন শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত!! মুত্তাকীদের দ্বারা কোন গুনাহ ঘটলে তারা যা করে সেকি তা করেছে!! তার উচিত ছিল নিজেকে শুধরে নেয়া, তার বিবেচনাশক্তি জাগ্রত হওয়া, নিজের অপরাধের ব্যাপারে সাবধান হয়ে যাওয়া। সে তো মানুষকে কল্যাণকর জ্ঞান শিক্ষাদানে নিয়োজিত। মানুষ নিরাপদ ভেবে তাদের মেয়েদেরকে তার কাছে জ্ঞান শিখতে দিয়েছে এবং নারীরাও তার নিকট থেকে জ্ঞান শিখাকে নিরাপদ মনে করেছে। এরপর সে এ ধরনের জঘন্য কাজে লিপ্ত হয়েছে। রাখালের দায়িত্ব নেকড়ের হাত থেকে পশুপালকে রক্ষা করা। কিন্তু রাখাল নিজেই যদি নেকড়ের চরিত্রে আবির্ভূত হয় তাহলে কি ঘটবে!! তার উচিত ছিল নিজের দুর্বলতার রাস্তা চিহ্নিত করে ফিতনার গলিপথ চিহ্নিত করে সেটা বন্ধ করে দেয়া। শয়তানের রাস্তা বন্ধ করে দেয়া। তার উচিত ছিল পুরুষদের মাঝে দাওয়াতী কাজ করা। পুরুষদেরকে দ্বীন শিক্ষাদানে রত হওয়া এবং নারীদেরকে শিক্ষাদানের দায়িত্ব অন্যদের জন্য ছেড়ে দেয়া। কিন্তু সে তা না করে ফিতনার পথে এগিয়ে গেছে। অবৈধ সম্পর্ক ও অবৈধ যোগাযোগ অটুট রেখেছে- এগুলো সব গুনার কাজ। তার উচিত ছিল এগুলো পরিহার করা এবং এর মূল ফটক বন্ধ করে দেয়া। অর্থাৎ নারীদেরকে শিক্ষাদান ও নারীদের সাথে যোগাযোগের রাস্তাটাই বন্ধ করে দেয়া- যেহেতু সে নারীর প্রতি দুর্বল। উসামা বিন যায়েদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি নবী (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, ‘‘আমার পরবর্তীতে পুরুষের জন্য নারীর ফিতনার চেয়ে কঠিন কোন ফিতনা আমি রেখে যায়নি’’।[সহীহ বোখারী (৪৮০৮) ও সহীহ মুসলিম (৬৮৮১)]

এই তালেবে ইলমের উচিত ছিল ফিতনার ব্যাপারে সাবধান হয়ে যাওয়া। কোন রাস্তা দিয়ে সে ফিতনাগ্রস্ত হচ্ছে তা চিহ্নিত করে সেটা বন্ধ করে দেয়া। কিন্তু এই পথে চলতে থাকাটা তাকে আত্মপ্রবঞ্চিত করেছে। তার দ্বীনদারিকে হুমকির সম্মুখীন করেছে। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেছেন: যখন মুহাজিরগণ মদিনাতে আগমন করলেন তখন অবিবাহিত সাহাবীগণের জন্য আলাদা গৃহের ব্যবস্থা ছিল। বিবাহিত সাহাবীগণের বাসায় তারা থাকতেন না। এটি এজন্য অবিবাহিত সাহাবীগণ বিবাহিত সাহাবীগণের সাথে একত্রে বসবাস করলে এতে ফিতনার আশংকা রয়েছে। আগুন ও কাঠকে একত্রে রাখা যেমন পুরুষ ও নারীর একত্রিত হওয়াও তেমন।[ইস্তিকামা, পৃঃ ১/৩৬১]

তার এ অবৈধ সম্পর্ক সম্পূর্ণ গোপনে বলে আপনি উলে­খ করেছেন। অবৈধ সম্পর্ক তো গোপনে রাখা ছাড়া কোন গত্যন্তর নেই। নাকি আপনি চান যে, সে তার প্রেমিকাকে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরাফিরা করবে। আপনি এই হাদিসটি শুনুন, আমাদের আশংকা হচ্ছে- না জানি সে এ হাদীসের হুমকির অন্তর্ভুক্ত হয়ে আছে। সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: আমি জানি কিয়ামতের দিন আমার উম্মতের মধ্যে একদল তিহামা পাহাড়ের মত শুভ্র নেক আমল নিয়ে হাজির হবে। কিন্তু আল্লাহ তাদের সেসব নেক আমলকে লাপাত্তা করে দিবেন। সাওবান বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! আপনি আমাদেরকে তাদের পরিচয় জানিয়ে দিন; যেন অজ্ঞাতসারে আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত না হই। তিনি বললেনঃ তারা তোমাদেরই ভাই, তোমাদেরই বংশধর। তারা তোমাদের মত তাহাজ্জুদগুজার। কিন্তু তারা নির্জনে নিভৃতে আল্লাহর নাফরমানীতে লিপ্ত হয়।[ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৪২৪৫, আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন]

আমরা সন্দেহাতীতভাবে বলতে চাই- আপনার জন্য উপদেশ হলো যেহেতু আপনি এই অঘটনের কথা জেনেছেন সুতরাং তার শিক্ষাগ্রহণ থেকে বিরত থাকুন। আপনি তার ক্লাসের বদলে নির্ভরযোগ্য আলেমদের নিকট থেকে ইলম অর্জন করতে পারেন। এমনকি সেটা ওয়েব সাইটের মাধ্যমেও হতে পারে, ক্যাসেটের মাধ্যমেও হতে পারে, বইয়ের মাধ্যমেও হতে পারে। আলহামদুলিল্লাহ; ইলম অর্জনের মাধ্যম প্রচুর। বরঞ্চ আপনার উচিত হবে আপনার বান্ধবীকে নসীহত করা সে যেন এই শিক্ষকের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে এবং আল্লাহর কাছে তওবা করে। পরবর্তীতে সে শিক্ষক যদি তাকে শরিয়ত মোতাবেক বিয়ে করতে চায় তাহলে প্রকাশ্যে সে যেন প্রস্তাব দেয়। যেভাবে দ্বীনদার ও সম্ভ্রান্ত লোকেরা প্রস্তাব দিয়ে থাকে। সে যেন বেদ্বীন লোকদের মত ডুবে ডুবে পানি না খায়। যদি আপনার পক্ষে সম্ভব হয় নারীদেরকে শিক্ষাদান থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে সে শিক্ষককে কোন বার্তা পৌঁছানো যেমন এমন কোন ইঙ্গিত প্রদানের মাধ্যমে যে, তার বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেছে যাতে সে এমন কাজ থেকে বিরত হয় এবং তার পাপের ভয়াবহতার ব্যাপারে সাবধান হয় তাহলে সেটা করাটা ভাল। কিন্তু এতে যেন খবরের ছড়াছড়ি না ঘটে এবং মানুষের কানাঘুষার ব্যাপার না ঘটে। কেননা কোন মুমিনের দোষ গোপন রাখা শরয়ী দায়িত্ব। বিশেষতঃ এ ধরনের খবর প্রচারের কুফল অনেক বেশী এবং দ্বীনদার লোকদের দুর্নামের কারণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked

{"email":"Email address invalid","url":"Website address invalid","required":"Required field missing"}

ISLAM


Get a Free E-Book

Get free islamic ebook.