আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী জীবনী
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী একজন বাংলাদেশী ইসলামী পণ্ডিত, বক্তা এবং রাজনীতিবিদ ও প্রাক্তন সংসদ সদস্য, যিনি ১২ জুন ১৯৯৬ থেকে ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ পর্যন্ত একজন সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
আল্লামা সাঈদীর জীবনী
আল্লামা সাঈদীর সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ-
জন্মঃ-
১৯৪০ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানী গ্রামে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী জন্ম গ্রহন করেন।
পিতার নামঃ
ইউসুফ সাঈদী যিনি একজন স্বনামধন্য ইসলামী পণ্ডিত বা আলেম ছিলেন।
মায়ের নামঃ-
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মায়ের নাম গুলনাহার বেগম।
আল্লামা সাইদীর সন্তানঃ-
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর চার ছেলে- মরহুম রফিক সাইদী, শামীম সাইদী, মাসুদ সাইদী এবং নাসিম সাইদী
শিক্ষা জীবনঃ-
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী পিতার প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসায় প্রাথমিক শিক্ষা জীবন সমাপ্ত করেন। পরে তিনি খুলনা আলিয়া মাদ্রাসায় কিছুদিন এবং পরে ১৯৬২ সালে ছারছিনা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে কামিল পাশ করেন। কামিল পাশ করার পর বিভিন্ন ভাষা, ধর্ম, বিজ্ঞান , রাজনীতি, অর্থনীতি, পররাষ্ট্র নীতি ,মনোবিজ্ঞান ও বিভিন্ন তত্তের উপর দীর্ঘ ৫ বছর অধ্যায়ন করেন ।
দায়ী ইলাল্লাহঃ-
১৯৬৭ সাল থেকে তিনি “দায়িইলাল্লাহ” হিসেবে আত্মনিয়োগ করেন । মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাইদী পৃথিবীর অর্ধশতেরও বেশি দেশে আমন্ত্রিত হয়ে ইসলামের সু-মহান আদর্শ মানুষের কাছে তুলে ধরেছেন। দেশে তাঁর ৫০ বছরের ইসলাম প্রচারের নমুনা সংক্ষেপে দেখুন:-
ক. চট্টগ্রাম প্যারেডগ্রাউন্ড ময়দানে প্রতি বছর ৫ দিন করে দীর্ঘ ২৯ বছর মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় । পবিত্র কাবা শরীফের সম্মানিত ইমাম এ মাহফিলে দু’বার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
খ. খুলনা সার্কিট হাউজ ময়দানসহ শহরের বিভিন্ন মাঠে প্রতি বছর ২ দিন করে দীর্ঘ ৩৮ বছর তাফসীর মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
গ. সিলেট সরকারী আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে প্রতি বছর ৩ দিন করে দীর্ঘ ৩৩ বছর যাবৎ তাফসীর মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
ঘ. রাজশাহী সরকারী মাদ্রাসা মাঠে প্রতি বছর ৩ দিন করে দীর্ঘ ৩৫ বছর যাবৎ তাফসীর মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
ঙ. বগুড়া শহরে প্রতি বছর ২দিন করে দীর্ঘ ২৫ বছর যাবৎ তাফসীর মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
চ. ঢাকা কমলাপুর রেলওয়ে ময়দান ও পল্টন ময়দানে প্রতি বছর ৩ দিন করে দীর্ঘ ৩৪ বছর যাবৎ তাফসীর মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
ছ. কুমিল্লা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে তিনদিন ব্যাপী প্রায় দীর্ঘ ৩১ বছর যাবৎ তাফসীর মাহফিলঅনুষ্ঠিত হয়।
রাজনৈতিক জীবনঃ-
১৯৭৯ সালে সাধারণ সমর্থক হিসেবে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী বাংলাদেশ জামায়াত-ই- ইসলামী এ যোগদান করেন। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ জামায়াত-ই- ইসলামীর মজলিসে শুরার সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। সর্বশেষ বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ জামায়াত-ই- ইসলামীর নায়েবে আমীরের দ্বায়িত্ব পালন করেছেন।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনেঃ-
ক. ১৯৭৬ সাল থেকে সৌদি আমন্ত্রনে রাজকীয় মেহমান হিসেবে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী হজ্জব্রত পালন করে আসছেন। ১৯৯০ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর রমজান মাস মক্কা মদীনায় থাকা তাঁর রুটিন হয়ে গিয়েছিল।
খ. ১৯৮২ সালে ইমাম সৈয়দ আলী হোসেনী খমিনির আমন্ত্রনে ইরানের প্রথম বিপ্লব বার্ষিকী উজ্জাপন উপলক্ষে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী তেহরান সফর করেন । ১৯৯১ সালে সৌদি বাদশার আমন্ত্রনে কুয়েত – ইরাক যুদ্ধের মিমাংসা বৈঠকে তিনি যোগদান করেন । ১৯৯১ সালে ইসলামী সার্কেল অফ নর্থ অ্যামেরিকা তাকে “আল্লামা” খেতাবে ভূষিত করে।
গ. ১৯৯৩ সালে নিউইয়ার্কে জাতিসঙ্ঘের সামনে অ্যামেরিকান মুসলিম ডে প্যারেড সম্মেলনে মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীকে “গ্র্যান্ডমার্শাল“ পদক দেয়া হয় । দুবাই সরকারের আমন্ত্রনে ২০০০ সালের ৮ই ডিসেম্বর আরব আমিরাতে ৫০,০০০ হাজারেরও বেশি শ্রোতার সামনে তিনি কোরআনের তাফসির পেশ করেন ।
ঘ. লন্ডন মুসলিম সেন্টারের উদ্ভধনি অনুষ্ঠানে কাবা শরিফের সম্মানিত ইমাম “শায়েখ আব্দুর রাহমান আস সুদাইসির” সাথে মাওলানা সাঈদী ও আমন্ত্রিত হন । মাওলানা সাঈদীর হাতে হাত রেখে ছয় শতাধিক অমুসলিম ভাই-বোন ইসলামের সুমহান আদর্শে দিক্ষিত হন।
অন্যান্য তথ্যঃ-
১ম কারাবরণঃ মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী ১৯৭৫ সালে প্রথম কারাবরণ করেন
হজ্বপালনঃ মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী ১৯৭৬ সাল থেকে ২০১০ পর্যন্ত প্রতি বছর পবিত্র হজ্ব পালন করেন
আল্লামা উপাধীঃ ১৯৯১ সালে ইসলামিক সার্কেল অব নর্থ আমেরিকা কতৃক তিনি ‘’আল্লামা’’ উপাধিতে ভূষিত হন
গ্রন্থ রচনাঃ আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ৭৫টি গ্রন্থ রচনা করেন
প্রিয় রাজনৈতিক দলঃ জামায়াত-ই- ইসলামী বাংলাদেশ
প্রিয় ছাত্র সংগঠনঃ ছাত্রশিবির এবং ছাত্রী সংস্থা
প্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব: আল্লামা মওদুদী রহঃ
প্রিয় বক্তাঃ শায়খ আঃ হামিদ কিশক, আহমদ দীদাত এবং সৈয়দ কামাল উদ্দিন জাফরী
প্রিয় লেখকঃ আল্লামা মওদুদী , হাসানুল বান্না ,ডঃ মুরিস বুকাইলি, মাঃ আঃ রহিম এবং কৃষাণ চন্দর
প্রিয় কবিঃ শেখ সাদী ,ওমর খৈয়াম ডঃ ইকবাল ,কাজী নজরুল এবং ফররুখ আহমদ
প্রিয় বন্ধুঃ অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ কামাল উদ্দিন জাফরী
ভয়ঃ আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে
ঘৃনাঃ দাম্ভিকতা ,কৃতঘ্নতা ,সময় অসচেতনতা এবং গিবত
স্বপ্নঃ বাংলাদেশে ইসলামী শাসন বাস্তবায়ন
কামনাঃ শহীদি মৃত্যু
অবসরেঃ অধ্যয়ন ,আত্মীয় স্বজনদেরকে সঙ্গদান
স্বরনীয় মুহূর্তঃ প্রথম কাবা দর্শন
জীবনের আদর্শ পুরুষঃ হযরত মুহাম্মদ সাঃ
২য় গ্রেফতারঃ ২৮ জুন ২০১০। এখন কথিত যুদ্ধাপরাধ মামলায় মৃত্যু দণ্ড এবং আপিলে যাবজ্জীবন জেল হওয়ায় তিনি জেল খানায় বর্তমান। তাকে ভালবেসে তার অবৈধ রায়কে কেন্দ্রকরে আন্দোলন ও প্রতিবাদ মিছিল করতে গিয়ে প্রায় ১৫০ এরও বেশি বাংলাদেশি বনি আদম শহিদ হন, তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করি, আমিন। "আসুন আমরা সবাই কুরআনের পাখির জন্য প্রাণ উজার করে দোয়া করি ।
আল্লামা সাঈদীর মৃত্যুঃ আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ২০২৩ সালের ১৪ আগস্ট হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৮৩ বছর বয়সে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এর আগে ১৩ আগস্ট রবিবার তিনি কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে হৃদরোগে আক্রান্ত হন।
পরে তাকে কারাগার থেকে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর ১৪ অগাস্ট সকালে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নেয়া হয়।
সোমবার রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। এর পরে সকালে পিরোজপুরে পৌঁছায় দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স। দুপুর দেড়টার দিকে পিরোজপুরের আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশন মাঠে সাঈদীর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজায় ইমামতি করেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। মাঠ পূর্ণ হয়ে পাশের এক থেকে দেড় কিলোমিটার সড়ক মুসল্লিখে ভরে যায়। ১৫ আগস্ট, মঙ্গলবার বিকেলে পিরোজপুর পৌরসভার মাছিমপুরে পারিবারিক কবরস্থানে ছেলের কবরের পাশে সাঈদীকে দাফন করা হয়।
সর্বশেষ: হে আল্লাহ, তুমি কুরআনের পাখি আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে দ্রুত মুক্ত করে কুরআনের দাওয়াতী কাজে মশগুল থাকার ব্যবস্থা করে দাও- আমিন।
আল্লাহ্ এই কুরআনের পাখী কে জান্নাত এর উচ্চ মাকাম দান করুক।