বিয়ের প্রস্তাবকারী পাত্রের পক্ষ থেকে পাত্রীর হিযাব পরিধানে অসম্মতি

বিয়ের প্রস্তাবকারী পাত্রের পক্ষ থেকে পাত্রীর হিযাব পরিধানে অসম্মতি

প্রশ্ন

প্রশ্ন: আমি তিউনিসিয়ার অধিবাসী একজন ধার্মিক মেয়ে। আমার সমস্যা হচ্ছে- আমাকে বিয়ের প্রস্তাবকারী ছেলে আমার হিযাব পরাকে মেনে নিচ্ছে না, এমনকি সেটা যদি আধুনিক যুগের হিযাব হয় সেটাও না। আমার প্রশ্ন হচ্ছে- আমি কি তার সাথে সম্পর্ক করব; নাকি প্রত্যাখ্যান করব? উল্লেখ্য, অধিকাংশ তিউনিসিয়ান ছেলে এ ধরনের মানসিকতার হয়ে থাকে।

বিয়ের প্রস্তাবকারী পাত্রের পক্ষ থেকে পাত্রীর হিযাব পরিধানে অসম্মতি

উত্তর

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। সম্মানিত বোন, আপনার জন্য আমাদের উপদেশ হচ্ছে- পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সমস্ত মানুষের জন্য আল্লাহর দেয়া উপদেশ। যে উপদেশের মধ্যে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ নিহিত রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন: “বস্তুতঃ আমি নির্দেশ দিয়েছি তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদেরকে এবং তোমাদেরকে –‘তোমরা সবাই আল্লাহকে ভয় কর।’[সূরা নিসা, আয়াত: ১৩১]

আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করে দুনিয়ায় কি ভাল কিছু পাওয়া যাবে! আল্লাহর সন্তুষ্টির পথ ছাড়া কি সুখের কোন পথ আছে! কোন মুমিন কি আখেরাতকে ধ্বংস করে দুনিয়া পেতে চাইবে! আল্লাহ তাআলা বলেন: “হে ঈমানদারেরা, আল্লাহকে ভয় কর। প্রত্যেক ব্যক্তি চিন্তা করে দেখুক আগামী দিনের জন্য সে কী (পূণ্য কাজ) অগ্রিম পাঠিয়েছে। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় তোমরা যা কিছু কর আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক অবগত। তোমরা তাদের মত হয়ো না যারা আল্লাহকে ভুলে গেছে। ফলে আল্লাহ তাদেরকে আত্মভোলা করে দিয়েছেন। ওরাই পাপাচারী।” [সূরা হাশর, আয়াত: ১৮-২০]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছেলেকে যেমন দ্বীনদার মেয়ে পছন্দ করার নির্দেশ দিয়েছেন ঠিক তেমনি মেয়েকে ও মেয়ের পরিবারকে দ্বীনদার ছেলে পছন্দ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমরা যে ছেলের দ্বীনাদারি ও চরিত্রের ব্যাপারে সন্তুষ্ট হতে পার সে যদি প্রস্তাব দেয় তাহলে তার কাছে বিয়ে দাও। যদি তা না কর তাহলে পৃথিবীতে মহা ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টি হবে।” [সুনানে তিরমিজি (১০৮৪) আলবানী সহিহ সিলসিলা (১০২২) গ্রন্থে হাদিসটিকে হাসান বলেছেন]

যে ব্যক্তি তার স্ত্রীকে হিযাব পরিধানে বাধা দেয় সে দ্বীনদার ও চরিত্রবানদের কাতারে পড়ে না; যা দেখে বিয়ে দিতে বলা হয়েছে। বরং প্রবল ধারনা হচ্ছে- যে লোক তার স্ত্রীকে হিযাব পরতে বাধা দেয় সে অন্য আরো অনেক কবিরা গুনাহ, হারাম ভক্ষণ, আল্লাহর বিধানাবলীর মর্যাদা রক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে শিথিলতা করবে। এ ধরনের লোক তার স্ত্রী ও পরিবারকে কিভাবে হেফাযত করবে, কিংবা কিভাবে তার সন্তানসন্ততিকে আল্লাহর আনুগত্যের উপর লালন-পালন করবে অথচ সে নিজেই গুনাহ করে ও গুনার কাজের নির্দেশ দেয়।

আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যা (ফিকহী বিশ্বকোষ) গ্রন্থে (২৪/৬২) এসেছে-অভিভাবকের কর্তব্য হচ্ছে- তার অধীনস্থকে তাকওয়াবান ও দ্বীনদার পুরুষের কাছে বিয়ে দেয়া। শাইখ সালেহ আল-ফাওযান ‘আল-মুনতাকা’ গ্রন্থে (৪, প্রশ্ন নং ১৯৮) বলেন: বিয়ের ক্ষেত্রে সৎ ও দ্বীনদার পাত্র নির্বাচন করা কর্তব্য। যে পাত্র বিয়ের পবিত্রতা রক্ষা করবে ও সুন্দর দাম্পত্য জীবন যাপন করবে। এ ক্ষেত্রে কোনরূপ ছাড় দেয়া জায়েয নয়। বর্তমানে এই স্পর্শকাতর বিষয়ে ব্যাপক অবহেলা দেখা যাচ্ছে।

এখন লোকেরা এমন ছেলেদের কাছে মেয়ে বিয়ে দেয় অথবা তাদের আত্মীয়দের বিয়ে দেয় যে ছেলেরা আল্লাহকে ভয় করে না, পরকালকে পরোয়া করে না। নারীদের পক্ষ থেকে এ ধরনের স্বামীর ব্যাপারে ব্যাপক অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। নারীরা এ ধরনের স্বামীদের নিয়ে সাংঘাতিক পেরেশানিতে পড়ে যাচ্ছেন। কিন্তু বিয়ের আগে তারা যদি সৎ পাত্র তালাশ করত আল্লাহ তাদের জন্য এমন পাত্র পাওয়া সহজ করে দিতেন। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে অবহেলার কারণে, অথবা সৎ পাত্রের ব্যাপারে গুরুত্ব না দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এমনটি ঘটছে। খারাপ লোক কোনদিন ভাল হয় না। তাই পাত্র নির্বাচনে অবহেলা করা জায়েয নয়। কারণ খারাপ লোক তার স্ত্রীর সাথে খারাপ আচরণ করবে। এমনকি স্ত্রীকে দ্বীনবিমুখ করে ফেলতে পারে। সন্তান-সন্ততির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) নুরুন আলাদ দারব ফতোয়া সংকলনে (বিবাহ/পাত্র নির্বাচন/প্রশ্ন নং-১৬) বলেন: মেয়ের অভিভাবকের উপর ফরজ হচ্ছে- প্রস্তাব দেয়া ছেলের দ্বীনদারি ও চারিত্রিক বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয়া। যদি ভাল তথ্য পাওয়া যায় তাহলে বিয়ে দিবে। আর যদি বিরূপ তথ্য পাওয়া যায় তাহলে বিয়ে দেয়া থেকে বিরত থাকবে। যদি আল্লাহ দেখেন যে, এই অভিভাবক শুধু দ্বীনদারি ও চারিত্রিক কারণে এই ছেলের কাছে বিয়ে দেয়নি তাহলে তিনি অচিরেই তার মেয়ের জন্য দ্বীনদার ও চরিত্রবান ছেলের ব্যবস্থা করে দিবেন। সমাপ্ত। আমরা আপনার জন্য ভাল মনে করি যে, আপনি এই ছেলের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করুন। আল্লাহ আপনার জন্য এর চেয়ে ভাল কোন পাত্রের ব্যবস্থা করে দিবেন। আল্লাহই ভাল জানেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked

{"email":"Email address invalid","url":"Website address invalid","required":"Required field missing"}

ISLAM


Get a Free E-Book

Get free islamic ebook.